হারাধন বৈরাগী
ইদানিং আমাকে এক অদ্ভুত রোগ ধরেছে—
দিবাস্বপ্ন দেখি।
আমার জন্মভিটার অদূরেই
একটি টিলার উপর আছে এক টংঘর;
টংঘরের পাশেই নীলাভ জলের এক লুঙ্গা।
আমি টংঘরের সাংসি থেকে তাকিয়ে দেখি—
কয়েকজন মহিলা জলে সাঁতার কাটছে,
তাদের ঊর্ধ্বাঙ্গে কোনো গাত্রবস্ত্র নেই,
তারা যেন এক একজন জলদেবী।
সাংসিতে শশা চিনার এনে
পারিদিদি আমার গা ঘেঁষে বসে
টাক্কল দিয়ে কেটে কেটে খেতে দেয়,
অসম্ভব মমতায়
ভাঙা বাংলায় কথা বলে।
দিদির শরীর থেকে উঠে আসা
বুনোফুলের ঘ্রাণ
আমাকে মোহিত করে—
যা ভাষায় বলা যায় না।
এই দিদিই
আমি ও দাদার স্কুলযাত্রার সঙ্গী—
জঙ্গল পথে তিন কিমি গেলেই স্কুল।
পিসন্ডির দিনে স্কুলপথে
দাদা আর দিদি গাছে উঠে
পিসন্ডি পাড়ে;
আমাকে গাছে উঠতে দেয় না।
তারা মগডালে উঠে
আমাকে ছুঁড়ে দেয় ফল
আর আমি নীচে বসে খাই।
দেখি, মগডালে ওঠা নিয়ে
তাদের প্রতিযোগিতা চলে।
মাঝে মাঝে দাদা আর পারিদিদি অভিমান করে
একেবারে কথা বলে না।
আমাকে জড়িয়ে ধরে পারিদিদি
তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়,
আসতে দেয় না আমাকে।
দিদির চুলে মুখ গুঁজে
সারারাত ঘুমাই—
সেই বুনোঘ্রাণে মোহিত হয়ে
মদালচা হয়ে যাই।
তারপর থেকে সেই ঘ্রাণের রহস্য
খুঁজে ফিরি আমি।
সহসা ঘুম ভেঙে গেলে
সম্ভিৎ ফিরে পাই—
দাদা তো সেই কবে নেই,
পারিদিদি কোথায়—তাও জানি না।
তখনই জঙ্গলে যাই;
সেই ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে—
মনে হয় পারিদিদি যেন
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
আর আমি
আবার জঙ্গলময় হয়ে উঠি,
মনে হয় আমি এখনও
মদালসাই রয়ে গেছি।
ঘরে ফিরে এসে
একটা বিমর্ষতা আমাকে ঘিরে ধরে;
যতদিন যায়,
জঙ্গল হারিয়ে যায়,
ঘ্রাণ ফিঁকে হয়ে আসে—
আমি হাঁপিয়ে উঠি।
ইদানীং জঙ্গল ছেড়ে
মঙ্গলে যাওয়ার কথাও উঠেছে।
একজন নারী তো প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে।
কিন্তু আমি মঙ্গলে যেতে চাই না—
তাতে কী!
বুঝতে পারছি,
একদিন আমাকেও হয়তো
মঙ্গলে যেতেই হবে।
কারণ তখন এখানে
না থাকবে জঙ্গল,
না শ্বাস,
না প্রাণ;
আর সেই ঘ্রাণ—প্রশ্নটাই অবান্তর।
ইদানীং আবার গোপন সন্দেহ জাগে—
আলিসা কার্সন নামের মেয়েটি
আমার সেই হারানো পারিদিদি নাকি?
সেই বুনোঘ্রাণ কি আমার জন্যই?
তার মঙ্গলে যাওয়ার জেদ—
নাকি সেখানে আমার দাদা’কেও
খুঁজে পেতে পারি?
যেন সেখানে গিয়েও
আমি জঙ্গলময় থেকে
মদালচা হয়েই থাকি।
১০/৮/২৫
0 মন্তব্যসমূহ