বাংলা কবিতা কেন লিখি || প্রাণজি বসাক।

বাংলা কবিতা কেন লিখি || প্রাণজি বসাক। 

সান্ধ্যকালীন আলোছায়ায় ঘেরা মায়াবী জালে না জানি কেমন করে ড্রাইভার পথ হারালো। আমি তেমন উত্তেজনা না নিয়ে বললাম, ভাই হাতে সময় আছে এবেলা খুঁজে নাও স্টেশন কোনদিকে। সে খানিক বল পেল বটে, তবে রাস্তা খোঁজার তেমন একটা তাগিদ না দেখিয়ে সে গাড়ি থামিয়ে জিপিএস খুলে গুগল কর্তৃপক্ষকে ডাকছে। ভাষা সুমধুর নয় বলে এবার দেশের ভাষায় যাকে পায় তাকেই ডেকে আনে। কোথায় রেলস্টেশন!  একজন বললেন সোজা গিয়ে ডাইনে রেললাইন বরাবর ধাঁই করে গেলেই পেয়ে যাবে। ঘড়ির কাঁটায় টেনশন।এপাশ ওপাশ হলেই খুলে  যাবে রেলের শিকল।কোন দিকে যাব কোন দরজার দিকে, দেখি পুলিশের দল,সন্দেহ নজর। 
কেন গো কবিতা লিখি!  শেষরাতের আচমকা প্রশ্ন রক্তে মিশে আছে বহুকাল ।  আমার কোনো ভাষা নেই পকেটে তবু ভয়।যদি বলে কথা কও, তবে কার কথা তুলব।কেউ কাছে পিঠে নেই। কেউ সামনে দাঁড়ালেও আজকাল তার নাম মগজে ভাসে না। চলে যাবার পর হঠাৎ মনে আসে নামসহ পুরো চালচিত্র কবিতাপত্র। তেমনি মুখের ভাষাও।কোন ভাষায় চলবে তুকতাক।বাংলাভাষা রাজ্যহারা, ভিনরাজ্যে নিষেধ। আমার বুকের ভেতর বুকফেয়ার বাংলা কবিতার বইমেলা। তাদের কেমন করে বোঝাই বাউল মন। টলমল দেহখানা কবে কখন নিথর পড়ে থাকবে, তার হিসেবখান কার কাছে। তার আগে উত্তর দিতে হবে - কবিতা কেন লিখি। কয়েক শ শব্দ মাত্র। একটু সময় চেয়ে নিচ্ছি জনাব। কিন্তু অফুরন্ত সময় নয়,ইচ্ছেশক্তিটা মিইয়ে পড়ার আগেই নামাতে হবে। কতরকমের নামাবলী যে গায়ে চড়িয়ে বিচিত্রভঙ্গিতে আমরা গর্বিত। কবি-কবিতাও বাদ যায় না। 
প্ল্যাটফর্মে দু'নজর চলতেই দেখি দুজন পরিচিত স্বজনদের নজরে ধরা পড়ে আছি।
চোখে মুখে বিদ্যমান, কবিতা কেন এবং কেন লিখি এমনকি এই বিদেশি ভিনগ্রহে। হাঃ হাই। 
বাংলা কবিতা নিয়ে যারা নিরলস নির্লিপ্ত। ওদিকে দেখি রেললাইন ধরে পেছন পায়ে টেরেন চুপিচুপি এসে হাজির। ভাইসাব ও ভাইসাব আপনার কি লোয়ারবার্থ?  মনে মনে বলি তাতে তোমার কি হে বাপু। সিনিয়র সিটিজেন, বুঝি গোঁফ পাকেনি!  আমি কবিতা লিখি। হামি বাঙলা কবিতা লিখি। কেন লিখি! 
কেয়ারটেকার বালিশচাদর দিলে কোমড়ের কাছে একটা জুতসই ঠেস দিয়ে বসে হিসাব করে দেখি কো-প্যাসেঞ্জার তিনজন চিনা,  একজন অসমীয়া , স্বয়ং এক দ্বিখণ্ডিত বাংলার অতিব সংবেদনশীল বঙ্গকবি আর একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ী। বললেন, হাম ২৫-২৫ বার কলকাত্তা গিয়া। আমি টোমাকে ভালুবাসি। চটকে গেল আমার কেনকবিতালিখি ভাবনাটা। অসমীয়া ছেলেটি বিমানবাহিনীর জোয়ান, মেরিড কোয়ার্টার পেয়েই ছুটছে জোরহাট ফ্যামিলি আনতে। বলি তোমার বউয়ের নাম কি কবিতা, বলে না। লেখ কি। লজ্জা পেয়ে অন্যমনস্ক হয়ে পড়ে। চিনা তিনজন বেশ হাসিখুশি। নিজেরাই নিজেদের মধ্যে একটা একটা কথা বলছে। কবিতা কি?এরা জানে?  হঠাৎ বেলাইনের লোকটা আমাকে নজর রেখে বলে, আপ বঙালি!  বললাম চালিশ সাল দিল্লি মে...  আমাকে থামিয়ে বলে, বাকি লাইফ। বাংলা ভাষা দূরে রেখে বলি, নর্দার্ন পার্ট অফ বেঙ্গল। সেভেন হান্ড্রেড কিমি ফ্রম কোলকাতা। সকালেই একটি ইংরেজি পত্রিকায় প্রকাশিত এডিটোরিয়াল পড়েছি, বেঙ্গলী স্পিকিং ইয়ুথ নট টু বি রিক্রুটেড ইন বেঙ্গালুরু কং। হায়। একটু সময় নিতে হল আজ প্রথমবার বাঙালি পরিচয় স্বীকার করতে। অন্তরায় অন্তরালে। 
কেন বাংলা কবিতা লিখি। আরো লিখব হাজার বার লিখব। দিনরাত লিখব। শহরবন্দরে লিখব।মন্দির মসজিদে লিখব।পতিতালয়ে লিখব।পড়ন্ত বিকেলের বারান্দায় বসে লিখব হারানো বাংলার বাংলা কবিতা,...  লিখবই।
জয় বাংলা কবিতার জয়। 
****--****

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ