বেহালাবাড়ির রূপকথা ও অন্যান্য একগুচ্ছ কবিতা || হারাধন বৈরাগী




বেহালাবাড়ির রূপকথা ও অন্যান্য 
একগুচ্ছ কবিতা || হারাধন বৈরাগী 


মদালচা 

ইদানিং আমাকে এক অদ্ভুত রোগ ধরেছে—
দিবাস্বপ্ন দেখি।/

আমার জন্মভিটার অদূরেই/
একটি টিলার উপর আছে এক টংঘর;/
টংঘরের পাশেই নীলাভ জলের এক লুঙ্গা।

আমি টংঘরের সাংসি থেকে তাকিয়ে দেখি—/
কয়েকজন মহিলা জলে সাঁতার কাটছে,/
তাদের ঊর্ধ্বাঙ্গে কোনো গাত্রবস্ত্র নেই,/
তারা যেন এক একজন জলদেবী।/

সাংসিতে শশা চিনার এনে/
পারিদিদি আমার গা ঘেঁষে বসে/
টাক্কল দিয়ে কেটে কেটে খেতে দেয়,/
অসম্ভব মমতায়/
ভাঙা বাংলায় কথা বলে।/

দিদির শরীর থেকে উঠে আসা/
বুনোফুলের ঘ্রাণ/
আমাকে মোহিত করে—/
যা ভাষায় বলা যায় না।/

এই দিদিই/
আমি ও দাদার স্কুলযাত্রার সঙ্গী—/
জঙ্গল পথে তিন কিমি গেলেই স্কুল।/

পিসন্ডির দিনে স্কুলপথে/
দাদা আর দিদি গাছে উঠে/
পিসন্ডি পাড়ে;/
আমাকে গাছে উঠতে দেয় না।/
তারা মগডালে উঠে/
আমাকে ছুঁড়ে দেয় ফল/
আর আমি নীচে বসে খাই।/

দেখি, মগডালে ওঠা নিয়ে/
তাদের প্রতিযোগিতা চলে।/
মাঝে মাঝে দাদা আর পারিদিদি অভিমান করে/
একেবারে কথা বলে না।/

আমাকে জড়িয়ে ধরে পারিদিদি/
তাদের বাড়িতে নিয়ে যায়,/
আসতে দেয় না আমাকে।/
দিদির চুলে মুখ গুঁজে/
সারারাত ঘুমাই—/
সেই বুনোঘ্রাণে মোহিত হয়ে/
মদালচা হয়ে যাই।/

তারপর থেকে সেই ঘ্রাণের রহস্য/
খুঁজে ফিরি আমি।/

সহসা ঘুম ভেঙে গেলে/
সম্ভিৎ ফিরে পাই—/
দাদা তো সেই কবে নেই,/
পারিদিদি কোথায়—তাও জানি না।/

তখনই জঙ্গলে যাই;/
সেই ঘ্রাণ নাকে এসে লাগে—/
মনে হয় পারিদিদি যেন/
আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।/
আর আমি/
আবার জঙ্গলময় হয়ে উঠি,/
মনে হয় আমি এখনও/
মদালসাই রয়ে গেছি।/

ঘরে ফিরে এসে/
একটা বিমর্ষতা আমাকে ঘিরে ধরে;/
যতদিন যায়,/
জঙ্গল হারিয়ে যায়,/
ঘ্রাণ ফিঁকে হয়ে আসে—/
আমি হাঁপিয়ে উঠি।/

ইদানীং জঙ্গল ছেড়ে/
মঙ্গলে যাওয়ার কথাও উঠেছে।/
একজন নারী তো প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছে।/

কিন্তু আমি মঙ্গলে যেতে চাই না—/
তাতে কী!/
বুঝতে পারছি,/
একদিন আমাকেও হয়তো/
মঙ্গলে যেতেই হবে।/

কারণ তখন এখানে/
না থাকবে জঙ্গল,/
না শ্বাস,/
না প্রাণ;/
আর সেই ঘ্রাণ—প্রশ্নটাই অবান্তর।/

ইদানীং আবার গোপন সন্দেহ জাগে—/
আলিসা কার্সন নামের মেয়েটি/
আমার সেই হারানো পারিদিদি নাকি?/
সেই বুনোঘ্রাণ কি আমার জন্যই?/
তার মঙ্গলে যাওয়ার জেদ—/
নাকি সেখানে আমার দাদা’কেও/
খুঁজে পেতে পারি?/

যেন সেখানে গিয়েও/
আমি জঙ্গলময় থেকে/
মদালচা হয়েই থাকি।/

১০/৮/২৫
 

||জঙ্গলের গর্ভে আমরা সবাই||

আমার ভেতরে একটা জঙ্গল আছে,/
একটা গিরগিটিও।/
জঙ্গলের মাঝে একটা বাঘ‌ও আছে,/
আর একটা ব্রুইফাং–ও।/

এই ব্রুইফাং গাছে একটা লক্ষীপেঁচারও বাসা,/
সে আমার নৈশ প্রহরী।/

যখন জঙ্গলের কুহক আমাকে জড়িয়ে ধরে,/
আমি প্রেমিক হয়ে যাই,/
বেরিয়ে পড়ি নীল পাহাড়ের চূড়ায়।/

জঙ্গলের মুগ্ধতা স্তিমিত হলে/
আমার হিংস্রতা জেগে ওঠে।/
জেগে ওঠে বাঘ—আমার প্রাচীন সরীসৃপ,/
সে জঙ্গলের ভিতর খুঁজতে থাকে কস্তুরী—/
আর, উন্মাদ হয়ে ওঠে।/

আমার পেঁচকটা নড়ে ওঠে,
সন্ধ্যার আঁধারে ভয়ানক শব্দ করে।/
ব্রুইফাংয়ের ডালপালা থেকে পাখি উড়তে থাকে,/
ছানারা কিচিরমিচির করতে থাকে।/
জেগে ওঠে আমার অনামা-চাঁদ।/

আমার বাঘটা ঢুকে যায় ভেতরে—/
পাখি আর ছানাদের রক্ষা করতে/
আমি ছেড়ে দিই গিরগিটিটা,/
সে বদলাতে থাকে রঙ।/

পেঁচাটা ঠিক ধরেই ফেলে—/
এটা আমারই কারসাজি।/
আমি তখন এক মুক্ত কয়েদি—/
শিকল তৈরি স্মৃতি আর পরিসরে।/

এই ব্রুইফাং-ই আমার বাকি জীবন—/
জঙ্গলের ভিতর–এক অবিনাশী যাত্রা।/



ডিজিটাল বেদনা 

যদি এমনটি হয়,কেমন‌ হবে
দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষার—রাজপথে
এক হাত ফোনে,অন্য হাত পকেটে।

মাঝখানে ফুটে ওঠুক—আর্তনাদ
রক্তের গন্ধ ছড়িয়ে পড়ুক ধুলোয়।

থামি বা না থামি 
ফোনের লেন্সটা ফোকাসে আনবো–
আঙুল স্পর্শ করুক শাটার—
মুখ তুলে আমার দিকে তাকাবে কনটেন্ট।

সময়ের ভেতরে সময় থেমে যাক–
হাতের মুঠোয় শীতল হয়ে আসুক আঙুল–
খানিকক্ষণ গ্যালারিতে ডুবে থাকুক চোখ!

স্ক্রিনে দেখা যাক রক্ত–
কিংবা রক্ত নয়–
চোখে জল আসুক বা না-আসুক
পিক্সেলের ভেতর থেকে ব্যাথা–
হাত তুলে তো ডাকবে না।

বাড়ি ফিরি কিংবা নাইবা ফিরি
যানজটে‌ই বা আটকে থাকি—
কনটেন্টে বাড়তে থাকুক
লাইক,ডিজিটাল বেদনা—-।

১১/০৮/২০২৫, কাঞ্চনপুর


বেহালাবাড়ির রূপকথা 

এক রাজপদের নাম ছিল বেহালাবাড়ি।
সেখানে এক বছর আগে জন্মেছিল,বেহালা নামের এক রাজকন্যা।তার বাবা রথীন্দ্র,যুদ্ধাদের রাজা।
জন্মের পর থেকেই‌ বেহালার কণ্ঠে ভেসে উঠে
মমতা আর ভালোবাসার সুর—সকালের মতো কোমল,আর তুলশীর মতো শান্ত।

রথীন্দ্র–এ সব পছন্দ করতেন না।তিনি ভালোবাসতেন যুদ্ধের দামামা,আর রক্তের অহংকার।তার বিশ্বাস ছিল ছেলে জন্মালেই বংশ রক্ষা পাবে,রক্ষা পাবে উত্তরাধিকার।তিনি জানতেন না,বংশের সত্যিকারের উত্তরাধিকার—মমতা আর দয়ার শিঁকড় ;আসলে কন্যাসন্তান‌ই বহন করতে পারে।

একদিন রাজা মেয়েকে কোলে নিয়ে,
চুপচাপ মিষ্টি পানীয়ের সাথে মিশিয়ে খাইয়ে দিলেন গরল।আর থেমে গেল বেহালার সুর।
প্রজাদের চোখ ভিজে উঠলো অশ্রুতে।
তাদের হৃদয় যেন ফিসফিসিয়ে বলল—
তুমি সুর ন‌ও রাজা,তুমি ভালোবাসো হাঙ্গামা,রক্তের সিঁড়ি।তুমি সেই বিরল রাজা,
নিজের সন্তানকে হত্যা করে শেষ করছো তোমার‌ই ভবিষ্যতের মমতা।

সময় কেটে যায়,রাজার বিবেক অন্ধ —
করতে পারলেন না,নিজের বিচার।বিচার এলো একদিন,মৃত্যুশয্যায়।সোনার খাটে শুয়ে থাকা 
সেই অহঙ্কারী রাজাকে নিজের ছেলে‌ই আস্তাকুঁড়ে ফেলে দিলো।মুখ ফিরিয়েও তাকালো না একবার।

তখন—বেহালাবাড়িতেই সুর হয়ে ফিরল বেহালার স্মৃতি,সেই সুর হয়ে উঠল বিজয়ের গান। 
আসল উত্তরাধিকারের বার্তা হয়ে,ভাসিয়ে নিয়ে গেল রাজার অহংকার।গাছে গাছে কাঁদতে লাগলো পাখি।মানুষের হৃদয় ভিজে উঠল ফের অশ্রুতে।


দৌড়

রোবট ঘোরে শহরের ছায়ায়,
নীরব চোখে দেখে মানুষের মুখ ও মুখোশ।
তার মুখে আঁকা নেই ব্যথার ফুল।

রোবট-মানবী বসে পাশে, রহস্যময় হাসে—
জিজ্ঞেস করে, 'তুমি কেমন আছো?'
মানুষ বুকে ফুল-সদৃশ চেপে বলে,'ভালো আছি।'
সে আদরের ভান করে চুমু খায়,
মানুষও—

রোবটের পাশে বসে ভালোবাসা 
খুঁজতে খুঁজতে
অবশেষে ক্লান্ত হয়ে পড়ে
মাটির গন্ধ,ফুল ও বৃষ্টির শ্বাসের জন্য
হাপিত্যেশ করে।
আর সুযোগ পেলেই,
গোপনে,ডিজিটাল ফোল্ডার থেকে
বের করে আনে, 
জড়িয়ে পড়ে পরকিয়ায়।

কে যেন কানের কাছে ফিসফিস করে—
‘তুমি যতই ওঠো ওপরে,
যতই নামো নিচে,
তাকাও যতই ভিতরে—

একদিন তুমি ছিলে গুহা;
তারপর আগুন পেরিয়ে,
চিত্র পেরিয়ে খোলা মাঠ।
চাকা পেরিয়ে,
অক্ষর পেরিয়ে আকাশ।

এখন তুমি মহাকাশ—
দৌড় ছিল–তোমার পরিচয়।
আর আজ‌ও দৌড়-ই নিয়ে যাবে তোমাকে 
দুধপথ পেরিয়ে, আরেক মহাকাশে।

পেছনে পড়ে থাকবে 
টাইম-টানেলের খোলা দরজা
হাতড়াতে থাকবে সৈকতে সৈকতে
চূর্ণবিচূর্ণ বালু-বালু স্মৃতি-ভাস্কর্য!

আর আকুলিবিকুলি 
করতে করতে 
চকিতে একদিন নিরুদ্দেশ হয়ে যাবে
মহাকালের কালো বিবরে।’


লেবেনচুস

একই কাপে আমি মদ ডালছি
যে কাপে খেয়েছেন আমার পূর্বজ।

একটা পথেই আমি হাঁটছি,
যেমন বংশানুক্রমে আমি বিবাহ করছি,
সংসার ধর্ম পালন করছি।
ওই একটা পথেই আমি দেখছি
পৃথিবীর আলো।

মত ও পথ আলাদা হলেও
বেঁচে থাকতে গিয়ে দুহাতই
আমি ব্যবহার করছি —
ডান হাত, বাম হাত।

মুখ দিয়ে গিলছি,
আর পায়ুপথে নিঃসরণ করছি —
এটাই আমার উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্তি।

অবশ্য মাঝেমধ্যে বিপ্লব করছি —
ছেলে হয়ে ছেলেকে বিয়ে করছি,
মেয়ে হয়ে মেয়েকে,
প্রয়োজনে লিঙ্গ পরিবর্তনও।

এও নুতন কিছু বলতে পারি না,
মাঝেমধ্যে এই সকল ঘটনা ও গল্প
দাদু কিংবা দিদার মুখে শুনেছি।

এ‌ই কথাটাও শুনেছি পূর্বজদের মুখে 
ক্ষমতাই আসল জাদুকাঠি,
হাবাগোবা হও,
আর লেবেনচুস চুষো।
[13/08, 06:17] স্রোত প্রকাশনা: হারাধন বৈরাগী 

||চাকমাঘাটের কান্না||

চাকমাঘাটের দাঁড়িয়ে আছে 
একটি নিভৃত ট্রাক —
তার গায়ে লোহার মায়া, 
মায়ার ভিতরে–জলের চোখ,
চোখের ভিতরে জঙ্গলের কান্না।

চোখ ডাকে —যেন ঘাইহরিণের গলা,
ঝোপের ভিতর শৃগাল,কাকের— সভা,
বাঘ তাকিয়ে আছে — নিঃশব্দ,
হাতির বৃংহন — নিঃস্ফলা।

রাত উঠে—রাত নামে,
লোহার দাঁত থেমে যায় কাঁটার দাঁতে।
এক জীবনের হরিণ– 
ঝুলে থাকে পাতার ফাঁদে,
কাকের কান্না ছড়িয়ে পড়ে–তুমুল হাওয়ায়।

জঙ্গলের 'আইন' —ছায়া হয়ে ঝুলে কাগজে-কলমে,
আর মানবতা হারায় জঙ্গলের গভীরে।

সূর্য— ইকোপার্কের ঠুঙ্গায় টাঙানো।
হরিণ যেন কাল ফাঁদে না পড়ে,
একটি পুরোনো প্রতিশ্রুতি!

পাতা ফিসফিসায়, পাখিও জানে —
বুনোপ্রাণের‌ও নিঃশব্দ আকুতি,
একটুখানি বেঁচে থাকার শুশ্রূষা।
 
কাল—হয়তো ফাঁদ, হয়তো মুক্তি।
মর্মন্তুদ মৃত্যু,হোক না আর বৃথা —
জঙ্গলও শিখুক —প্রাণী বনের‌ই হোক 
বা উপবনের,তার‌ও প্রাপ্য,সহানুভূতি।


বাঁশি 

বাঁশি থাকলেই কৃষ্ণ
রাধার বিরহ ও বিলাপ

বাঁশি নেই —
নেই রাধার অভিসার।

যতদিন বাঁশি থাকে—
কৃষ্ণ বাজেন

বাঁশিই কৃষ্ণ
বাঁশি ছাড়া__এক প্রচ্ছায়া।


||জঙ্গলের গভীরে আলো||

জঙ্গলকে চুম্বন ভুলে
পাখিদেহ ভাসিয়ে দিয়েছি বাতাসের স্রোতে।

নীলাভ উন্মাদনায় মুখ গুঁজে
কথারা ডুবে যায় প্রণয়ের কাছে।

অরণ্য জেগে থাকে,
হা করে যেন
কোনো নক্ষত্রের সিগন্যাল পায়।

গাছের গায়ে ঝুলে থাকা লতা
বাতাসের মুখে আঙুল রাখে।
অদৃশ্য হাওয়া পাখিদেহ ঠেলে দেয়
আকাশের স্রোতে —
পেরিয়ে যায় শিরা-উপশিরা।

একদিন, সারেথি ঠিক এসে দাঁড়াবে
জঙ্গলের গভীরে —
যেখানে গল্প ভাঙে না,
কথারা আরও আন্তরিক হয়ে ওঠে।


ঈশ্বর

অদৃশ্য ছায়ারা হাঁটে  
প্রাচীন শিলায় গাঁথা নৈঃশব্দ্যে  
আলো যুক্তির ঘর ভেঙে  
ধরা পড়ে বুকের স্পন্দনে।

মন নয়, যুক্তিও নয়—  
দিগন্তে থমকে থাকা এক অনামা-ধ্বনি 
চিনতে গেলে চোখ নয়  লাগে ‘অতিন্দ্রীয় দৃষ্টি

সংযমের আগুনে জ্বলে ওঠে 
অনুভবের ধ্যান,  
ভোর হয় তখনই  
যুক্তি ছাড়িয়ে গোপনে বলে ওঠে কেউ—  
"দেখেছি, জানতে চাও তুমি?” 

কতজন থমকে দাঁড়ায়?  
কতজন মন রাখে অতীন্দ্রিয় ছায়ায়?  
দৃষ্টি চায় প্রমাণ, হৃদয় চায় উপলব্ধি  
রহস্যের ঘর খোলে বিচরণের অনুভবে ।

ঈশ্বর কথা বলে না 
টের পাওয়া যায়... নৈঃশব্দে।

২৮/০৭/২০২৫


বদলি-রোগ

একসময় বদলি-রোগ ছিল/
ছোঁয়াচে রোগের মতো।/
সবচেয়ে ভালো শিল্পীটিও হঠাৎ/
বদলি হতেন অনভিপ্রেত।/

আর এমন বদলি-রোগ হলে/
সারাতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অভাব/
হতো না, কোথাও —/
প্রায় সকলেই পেয়ে যেত মোক্ষম দাওয়াই।/

আজকাল আর তেমন ধরা পড়ে না এই রোগ/
এখন বদলি যেমন জটিল, তেমনি অকাম্য‌ও/
আর,একবার এই রোগে পেলে সারানোর জন্য/ 
বিশেষজ্ঞ খুঁজে পাওয়া আরো কঠিন।/

রোগী বুঝে এই অসুখ সারাতে/
একজন ডাক্তারের পরামর্শই যথেষ্ট নয়/
চাই ,একটা বিশেষজ্ঞ-বোর্ডের প্রেসক্রিপশন।/

গাছ

আমার জন্ম-মাটি ছুঁয়ে আছে 
যে আওয়াল-গাছ,  
সে জানে—আমার নিঃশ্বাসে 
কেমন বিষণ্ণতা জমেছে।  
বারংবার তার ছায়ায় ফিরে যাই,  
কখনো হাসি, কখনো কাঁদি 
কখনো অভিমান ও বেদনায় ক্লান্ত হয়ে পড়ি…

তার গায়ে আমার দাদুর গল্প আছে
আমার দিদার
মায়ের ঘ্রাণ,বাবার চোখের জল,  
আত্মহত্যার চিঠিতে লেখা প্রেমিকের নাম  
আর প্রেমিকাকে আত্মহত্যার 
প্ররোচনার মতো এক দুর্বোধ্য ভালোবাসা।
তাদের নাম ধরে চিৎকার দিয়ে ডাকি—  
কেউ সাড়া দেয় না।

চিৎকারে ধুলো উড়ে, কেউ আসে না।  
হাসি, কাঁদি, অভিমানে ফেঁটে যাই।
উড়ে উড়ে শাখায় শাখায় ভাঙি—রাগ।  
সে নির্বিকার —--

আমি তাকে জড়িয়ে ধরি–
ঝাঁকুনি দেই
ধাক্কা দেই বারংবার 
রাগ,ব্যাথা অভিমান আর ক্লান্তিতে।  

গালাগাল দেই —   
রাগে ভেঙে ফেলি তার একটা ছোট্ট ডাল।
সে রাগ করে না
কোনো অভিমান‌ও না
পাতা নাড়িয়ে আমার দিকেই ঝুঁকে পড়ে— 
পাতা মেলে ছায়া দেয় আমার‌ই মাথায়।
 
দুঃখে ও ক্ষোভে দূরে চলে যাই 
ভাঙতে থাকি পাহাড়ের চড়াই উৎরাই
দেখি অজস্র গাছ ঘিরে রেখেছে 
আমার নিজস্ব চৌহদ্দি।  
ছড়িয়ে রয়েছে আমার স্মৃতি—বিস্মৃতি  
আমার ভুল, আমার ক্ষমা
আমার ভালবাসা ও ঘৃণা।

একটি গাছের গুঁড়িতে হাত রাখি
টের পাই—  
আমার মাথা তার মাথার উপর  
আমার কান্না তার শাখা-প্রশাখায়  
আমার হাসি তার পাতায়  
আর আমার সমস্ত শরীর  
তার শরীর বেয়ে মাটি ছুঁয়ে গেছে শেঁকড়ে।

সে চায় না কিছুই,  
দাঁড়িয়ে থাকে নির্বিকার—  
আমার অনন্ত শয্যায়
যেন নীরব এক আরশিনগর ।

২৬/০৭/২০২৫


যূথবদ্ধ 

পথের ধুলোয় নয়—/
গল্পটা বাঁধা জঙ্গলের ছায়ায়।/
একটি আহত হরিণ ধুঁকছিল/
কন্টক-লতার ঝোপে।/

আঁশটে রক্তের গন্ধে/
গা ঘেঁষে বসেছিল বাঘ—/
চারপাশে ছিল দঙ্গল ।/
হরিণের ঝাঁক, বানরের আর্তনাদ,/
শেয়ালের কূটবুদ্ধি, হাতির প্রমত্ততা—/
এগিয়ে এলো না কেউ।/

উড়ে গেল এক জীবনের মায়া— হরিণ;/
অলক্ষ্যে গ্রাস করল শব্দের তত্ত্ব।/
ভেজা পাতায় ছড়াতে লাগল কানাকানি।/
বাতাসে ছড়াতে লাগল ফিসফিসানি।/
স্পষ্ট হল না কোনো সংকেত।/
এ যেন মঙ্গল নয়—/
জঙ্গল থেকেও উঠল না কোনো দঙ্গল।/

অবশেষে এলো বাঘ, এলো হুঙ্কার;/
দাউ দাউ করে জ্বলে উঠল বানরের জোট।/
আলোড়ন উঠল—/
লাফিয়ে পড়ল আগুন।/
এক বৃক্ষ ফল দেয়নি বলে/
জঙ্গলটাই তছনছ হলো,পুড়ল আগুনে।/
আর কস্তুরীর গন্ধে বিভোর হয়ে উঠল পক্ষঘাস।/

একে কি বলা যায় ‘বিছুটির জঙ্গল’?/
নাকি বলা যায় বনমহিষের দঙ্গল?/

“বিছুটি” নয়।/
তারা যদি যূথবদ্ধ হতো—/
মৌন শান্তির মতো/
লৌহমায়ার আঁধার ছিঁড়ে/
রক্ষা করা যেত— মায়াবী হরিণ।/

তারা চুপ ছিল।/
তারা-ছিল গোপন ও গভীর/
আর অভিপ্রায়—/
শুধুই শিকারের ব্যূহচক্র।/

আমি জানি।/
সকলেই জানে—/
‘বিছুটিবন’ মানে নয় বুদ্ধ, নয় আলো—/
এ কেবল এক অনাকাঙ্ক্ষিত ছায়াবিকারের খোঁজ।/
এ টঙ্কার নয়—/
এ কেবল ধ্বনির অসার সংঘাত।/

জঙ্গল জানে—/
প্রকৃতি একত্রে আশ্রয় আর বিচারক।/
ঘাসে আগুন দিলে/
উবে যায় জলের প্রাচীন সংকল্প।/

জঙ্গলে চাই যূথবদ্ধতা—/
ঝড় থামাতে, আগুন নেভাতে।/

“মোব” নয়, চাই “মোবিলিটি”।/
মোব অন্ধ—/
মোবিলিটি এক সমান্তরাল পথ।/
ধ্বংসের উৎসবের মাঝে/
ফিরিয়ে আনা যায় না হরিণ,/
দাবানল নেভাতে পারে না কেউ।/

গাছ :২

আমি বারংবার ফিরে যাই/
সেই আওয়াল গাছের ছায়ায়— /
যে আমার জন্মভূমি ছুঁয়ে আছে/
নির্বিকার ও নিষ্পলক /
এখনো নিঃশব্দে আমার নাম ধরে ডাকে।/

তার শিকড়ে গাঁথা আছে আমার দাদার বন্ধুর/ গাঁদাবন্দুকের অনিচ্ছুক নৃশংসতা/ 
ঝাঁঝরা হ‌ওয়া আমার শরীরের /
ছিন্নভিন্ন রক্তফোঁটা।  /
বন্ধুর পাশে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া দাদার /
অসহায় চিৎকার, ছিন্নভিন্ন বিকার।/

দৌড়ে ছুটে আসা মায়ের আঁচলের ওমে / 
জড়িয়ে ফেলা আমার কান্না-জল। / 
নিস্তেজ মায়ের মুখে ঢালা জলের মমতা /
দিদার মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়া ধুলো।/

দাদুর কিড়িমিড়ি দাঁতে-কাটা দমবন্ধ যন্ত্রণা—/  
মাতায় হাত দিয়ে বাবার মাটিতে বসপড়া / 
কাঁপাকণ্ঠে হায় হায় অশ্রুঢালা /
দাদার বন্ধুর হতবুদ্ধির স্তব্ধতা। /
 
তার ছায়া আমার চোখে জল হয়ে নামে, / 
তার কোলে পাতারা রিক্ত সান্ত্বনায় ঢেকে দেয় / 
আমার বুকের শূন্যতা।  /

আমি এখন আর ভেঙে পড়িনা—  /
মাথা নিচু করি।  /
সে হালকা বাতাসে আমার চুলে হাত রাখে— / 
নিঃশব্দ, অভিমানহীন।  /

আর কিছু বলি না—/  
আমি এখন তার‌ই মতো নির্বিকার।  /
ভাবি, এবার তো তার সমকক্ষ‌ই আমি—/ 
 
সবিস্ময়ে দেখি সে এখন /
আমার থেকেও যোজন দূরে  নির্বিকল্প... /
আমাকে যেন নিশ্বাসের ছোঁয়ায় বলে / 
“আমি সব শুনি।”/
  
আমি শিখেছি—  /
নিভৃতচারীর  সাথে প্রতিযোগিতা করা যায় না। / 
তাকে প্রতিযোগী ভেবে যে যত এগিয়ে যায়/  
সে ততই প্রতিযোগিতার মাঠ থেকে দূরে–/
নিভৃতির ভিতরে ঢুকতে থাকে ।/

সে কখনোই কোনো কিছুর শব্দে জবাব দেয় না/
জবাব দেয় নিজের বিম্বিত ছায়ায়/ 
অনুভূতির ছোঁয়ায়।/  

আমার সমস্ত আকাশ এখন/ 
তারই ছায়ায় ঢাকা।/

২৭/৭/২৫

 ব্রুইফাং 

তুমি এক‌ ব্রুইফাং 
নীরব ও জ্যোতির্ময়।
পাতায় পাতায় জলের ফোঁটা। 
তোমার স্পর্শে পথ পেয়েছে বিধবা পাখিরা।

জঙ্গল ঘুমায়
তবুও তোমার শিকড়ে বাজে 
নিঃশব্দ ব্যাকরণ।
পাতা ও কুঁড়িতে 
এক অন্তর্লীন শিখা—
শাখায় শাখায় দিশা।

তুমি এক ব্রুইফাং 
জঙ্গলের ভিতরে, অবিরাম রোয়াজা
তোমার তর্জনীতে এখনো 
আলো খোঁজে অসহায় প্রাণীরা।

||জুমচক্র ||

নদী বয়ে যায় —
জানি না নৌকার সাঁতার,
জানি না ডালের ভাঙনের ভাষা।

কেবল দাঁড়িয়ে থাকি—
একদিন চমপ্রেং, একদিন সুমু 
কখনো গলায়-বাঁধা ঢোল হয়ে 
যেন জুমের ঢালে ঝুলে থাকা 
ক্লান্তির দাওয়াই–খোঁপা-তিলগাছ!

আলোর ফোঁটা বুনে দিতে চা‌ই 
জুমিয়ার ঘামের সুতোয়।
যখন জুমে সুচ্যেং-টাকলে 
বুনে যায় বীজ,আগাছা সাফ করে
প্রতিটি বীজের চোখে ফলাতে চায় রোদ্দুর—

এখন রোদ্দুরের বাজার অসম্ভব চড়া।
জেনেও অসহায় জুমিয়ারা
রোদ্দুরের প্রতিযোগিতায় হেরে যায়
মাটির স্বপ্নগুলো জুমের ভিতরে মুখ থুবড়ে পড়ে।

জঙ্গলের রাজহরিয়ালেরা সঙ্গম শেষে ফিরে আসে
কাইরিঙের সাংসিতে বসে—
তাদের গলায় ভিজে ওঠে মরমের সুর।
নদীতে বাঁধা এক নৌকা ডাক দেয়—
এসো, আমার পালের ছায়ায় উঠো!

বাদক নির্বিকার—
জুমিয়াদের কেউ কেউ 
প্রলোভনের ঘূর্ণিতে জলে নামে,
সকলেই সাঁতার জানে না।
কখনো উল্টে যায় নৌকা
কেউ কেউ ডুবে যায় 
কেউ কেউ তীরে উঠে আসে—
তাদের স্বপ্নগুলো হোঁচট খায়
তারা গায়ে মাখে গিরগিটির রং
আর পাতার মতো মিশে যায় জনপদে।

জুমিয়াদের কেউ কেউ 
পাতায় চড়ে উড়তে চায়
কেউবা মাঝপথে হারায় দিশা।

এখন আর নৌকা আসে না—
পাতারাই,স্রোত বেয়ে,ভেসে ওঠে ঊজানে,
ঘুরে বেড়ায় জুমিয়াদের চারপাশে,
তাদের দেখলেই চেনা যায়—
তাদের জুমিয়া-মুখে এখন শিয়ালের ব্যঙ্গ।
তারা শেখাতে চায় নৌকার ম্যাজিক সাঁতার—
বাদকেরা তাদের এড়িয়ে যেতে চায়,
তবু পাতার ম্যাজিক ঘুরে ফিরে আসে,
চন্তাইর মন্ত্রের মতো ঘুরে বেড়ায় জনপদজুড়ে।

ততদিনে বাদকেরা ভুলে যায় চমপ্রেং,
ভুলে যায় সুমু, ভুলে যায় ঢোল,
ভুলে যায় কাইরিঙের গানের কথা—
তারা নিজের বাকল বদলে অস্তিত্বের 
লড়াইয়ে সামিল হতে চায়
জুমকে করতে চায় স্বপ্নের বাগান।

তারা ডাক দেয় সেই জুমিয়াদের,
যারা এখনো ঠিকে আছে শিঁকড়ে—
ঝএসো, একসাথে বাগানের স্বপ্ন বুনি,
যেখানে অর্থ ঝুলে গাছে
আকাশ থেকে মাঝে মাঝে শিশুরা ঝরে পড়ে
চারাগাছ হয়ে—
আসো, তাকে জড়িয়ে ধরি,
সেই আমাদের সঙ্গমের নৌকা।

এটা আর কেবল স্বপ্ন নয়—
এটা মগজের বাস্তবায়ন–
ফল-ফুলে ডালে 
অক্ষরে ভরা এক বাস্তুতন্ত্র।

আমাদের সন্তানেরা শিখবে—
বাগানের শিঁকরের ভাষা,
স্বপ্নের ভাষা 
তারা জানবে—
কীভাবে একটি বীজ সঙ্গম হয়ে
একটি বন হয়ে ওঠে
একটি বাগান হয়ে ওঠে।
একটি পরিবেশ হয়ে ওঠে—
স্কুলে স্কুলে গেঁথে যাবে 
বর্ণমালার উত্তরাধিকার।

শৃগালেরা আর পাবে না পথ—
মুখোশ আর চলবে না বাতাসে।
তখন আমরা, গানে গানে—
মাটির ভিতর স্বপ্নের চারা বুনে
ফের ফিরিয়ে আনবো চমপ্রেং
সুমু আর ঢোলের মাতন
জুম হবে আত্মার অমনিবাস।


ডাহুক 

খাঁচার ভেতর কোন সে ডাহুক
করছে কানাকানি 
হাত নাড়িয়ে ডাকছে আমাকে 
কোন সে বৈরাগী?

গোমতী নদীর উজানে 

যাইনি কখনও 
গোমতীনদীর এই বাঁকের সেই উজানে
এই বাঁকে এসে দাঁড়ালে 
মন উজানে যেতে চায়
ওখানে কথা আছে কি কোনো?
‌আছে কী কোনো অনামা-ধ্বনি?
কোনো অজানা কাঁপুনি?

কতদিন এসে  দাঁড়িয়েছি এই বাঁকে 
যাবো যাবো করেও যাওয়া হয়নি।
এখানে এপার ওপারে হৃদয় জুড়েছে 
চকচকে সেতু।
ওপারে তাকিয়ে দেখি 
লেডের ফকফকা আলোয় 
অশোকের গেরস্থালি জুড়ে
সুখের কানাকানি,
করালবদনার ব্যাক্তিগত আঙ্গিনায় 
আলোর ঝলকানি ,বিপননের কূটকাচালি।
নৈঃশব্দ্য আর আঁধারের জননীর চৌহদ্দি জুড়ে
কোলাহলের বাঁশি।

মন যেতে চায় উজানের ধারায়
যেখানে রঙিন-কোলাহল আর কূটকাচালি 
মিশে যায় জলরেখায় 
জেগে ওঠে এক অপার্থিব-ধ্বনি
পাথরের দেওয়ালে চিত্রার্পিত দেবীর মতো
গেঁথে যায় খাঁচার ভিতরে।

জানো কি তুমি যাবে কোথায় 
নাকি এসেছো ফিরে?

"এই পথ কি নিয়ে গেছে তোমাকে?—
যেখানে অনুরণন উঠে জলের ঊপরে
দশবিদ্যার দেওয়ালের— ধ্যানে, 
নৈঃশব্দ্যে ,চোখের আলোয়।

খোদাই‌ও হয়েছিল নিঃশব্দে 
ইতিহাস আলোচিত অনুমানে
বিমূর্ত ভাবনায়।

সখা, বলো — পেয়েছো কি তারে? 
ওইখানে সে কি এখনো সুর হয়ে বাজে, 
তোমার নীরবতায়?  
নাকি এই বাঁকেই খসে পড়েছে 
তোমার অপেক্ষার সকল পাতা!

নাকি সেখানে 
নৈঃশব্দ্যকে ছাপিয়ে উঠেছে 
বিপননের চকমকি বাজার কুর্মপীঠের মতো 
যেখানে প্রত্যাশা আর বিপননের মাঝে  
লেশমাত্র স্পর্শ নেই ভালোবাসার।

মন যারে চায় পেয়েছো  কি তারে?
 
নদীর সেই উজানে, 
আলোহীন হে সখা— 
জ্বলেছে কি আলো তোমার চোখে?  
পেয়েছ কি তারে,যারে হারিয়েছো 
এই তো সেদিনের অসুখে!

জ্বলেছে কি সেই‌ রহস্যমোড়া আলোআঁধারিতে  তোমার আরাধ্য?সেই নৈঃশব্দ্য!
সেরেছে কি তোমার অসুখ!

নাকি বিপনন সজ্জা ভেঙেচুরে খেয়ে ফেলেছে 
তোমার মনোভূমি?তোমার ধ্যান?
পেয়েছো কি তারে মন চায় যারে? 
সুস্থ হয়ে ফিরেছো কি তুমি?
বলো গো সখা  আমারে–!

জুম

(১)

রাইমার টংঘরের বেড়া খসে পড়েছে  
আষাঢ়ের মেঘে ভেসে আসছে বেদনা  
বাতাসের শ্বাসে বিরহের নৈঃশব্দ।  
 
বিষাদের বুকে চমপ্রেং বাজে—  
সুরের মূর্ছনায় কাঁদে গাইরিঙের মন  
বাঁশপাতা-চালের ধারায় ভিজে যায় সাংসি
কোনায় কোনায় জমে উঠছে উদাসিন জল।  

(২)

খুমপুই–যে পাড়া ছিল একদিন 
এখন শুধুই গল্প—
গতজন্মের স্বপ্ন-রাঙানো  
   
ছাতিমের তলে ছায়া নেই
পাতায় পাতায় শুকনো বিলাপ 
শ্রাবণ ফুরোলেই মুখ লুকোয় কুথুইমণিরগ 
পেছনে পড়ে থাকে জুমের পাংশুটে মুখ।

প্রগাঢ় রোদে জ্বলে উঠছে আশ্বাস  
একমুঠো শূন্যতায় কেঁদে উঠছে বাতাস
দুরন্ত পায়ে হেঁটে চলেছে প্রতিবেশী আকাশ!

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ