দেখে নিও || প্রদীপ দাস
একদিন একটা পৃথিবী আমারও হবে,
যার ব্যাস-জ্যাদির হিসেব নাও মিলতে পারে;
তবু তার পরিধি হবে অসীম বিস্তৃত,
পাইয়ের অমোঘ মানও হাতে বাঁধা থাকবে—
অনন্ত গাণিতিক সত্যের মতোই।
আজকের ক্ষয়িষ্ণু জুয়াড়ি,
হয়তো কালকের নিপুণ খেলাড়ি হবে;
আজকের ভাসমান 'আমি'—
রূপ নেবে দৃঢ় মুষ্টিবদ্ধ 'আমি'তে।
দেখে নিও— তোমার বিদ্রোহ ও উগ্রতা,
চরমপন্থার ছায়া সব
অবশেষে মিশে যাবে আমার চিন্তার সাদা মেঘে।
তোমার অহঙ্কারী কোলাহল স্তব্ধ হবে
শান্তির নীরব ধ্বনিতে।
তবু অনুরোধ—শেষ শ্বাসটুকু ফেলো না,
কারণ তুমি-ই সেই নিভৃত কেন্দ্রে,
চিরন্তন ঘূর্ণির মাঝখানে—
আমার পৃথিবীর একমাত্র নীরব প্রহরী।
—-------×—-------
আত্মকথন
কবিতা লিখতে জানি না আমি
হাজার চাবুকের ঘা খেয়ে দেখি,
বুঝি না, কিসের এত ব্যথা—
যমের দুয়ারে দোল খেতে খেতেও
জানিনা, কী নিয়ে এ জীবনের মেলা।
আমার কিছুই নেই,
শুধু একটা মন, ক’জন পথশিশু ছাত্র,
আর সুরমার সহোদরা কুশিয়ারা।
বুকের ভেতর ওই টুকরো নদী
এইটুকু ভালোবাসা কি যথেষ্ট নয়?
কবিতা আমার হয় না,
আমার আছে পথের ধুলো, পায়ের তলা,
পুঁঠিমারা আর লক্ষ্মীবাজারের পথের গান।
ঘামের গন্ধ মাখা সেই চলার পথটাই তো সাধ,
পথিকের খোঁজে হাঁটা কি কবিতা নয়?
শুধুই কি চাই, আরে গরীব ভাই?
সে চায়,
অনেক কিছুই চায়,
বৃষ্টি চায়, বন্যা চায়,
রোদ চায়, খরা চায়,
অন্ন চায়, ধ্বংসের ছায়া চায়।
মুক্তি চায়, কিন্তু মরতে নয়,
শান্তি চায়, ত্যাগের পথে নয়,
বুদ্ধি চায়, বোঝার চাপ নয়,
জ্ঞান চায়, তবে বিবেকের বাধা নয়।
টাকা চায়, বাড়ি-গাড়ি, সব চায়,
অনাহারীর আহারও চায়,
সবল-দুর্বল সব চায়,
এমনকি সবার মনোযোগটাও পেতে চায়!
তবুও সে গরীব হয়ে বাঁচতে চায়।
পাগলান্বেষণ
আস্ত পাগল অথচ গৃহী,
ব্রহ্মাণ্ডের ভাণ্ডে শখের খোঁজ,
আবার সেই ব্রহ্মাণ্ডে নিজ ভাণ্ডের কুঁজ।
কত ঘাটে জল ভরেছি,
কত পাত্রে তুলেছি সব।
জানি না, কোথায় পাবো পতিত পাবন?
আসলে সবই কানা,
কোনো পাত্রেই জল ধরে না।
তাঁকে তুষ্ট করা হয় না,
আসলে দিনটা ফকিরের,
দেহটাও বাউলের,
হয়তো সব জল আমার আঠারো মোকামেই পড়ে রয়।
হয়তো এক বিরাট শূন্যতার সন্ধানে
হয়তো এক বিরাট শূন্যতার সন্ধানে,
শূন্যতার অন্ধকারে, ছোট-বড় সবই এক।
নিষ্পত্তির পথে খোঁজে,
বহু শূন্যতা আবিষ্কারের অপেক্ষায়।
সুরের চিরন্তন নির্যাসে,
পাইথাগোরাসের তত্ত্বে,
অঙ্কের সূত্রগুলো রহস্যময়—
সমস্ত শূন্যতা কি আসলে একরকম?
শূন্যতার অম্ল তাপে,
প্রাণ চলে যায়;
তবুও যাত্রা অক্ষুণ্ণ,
স্পর্ধার বাহুল্যে;
ব্রহ্মচর্যের ছন্দ মুছে যায়।
দিনশেষে কি শূন্যতা,
নিদান-সহযাত্রীর আরেক নাম;
অথবা এই শূন্যতাই
জীবন ও মৃত্যুর মাঝে মীমাংসা,
যেখানে ভ্রমণ শেষ হয় না।
খোঁজ
মণ্ডপে ভিড়,
ঈশ্বর আছেন, মানুষ আছে,
সবই আছে—
শুধু আমি নেই।
ভীড়ে সেই সত্তা হারায়,
ছায়া থাকলেও শূন্যতার ছাপ।
প্রদীপের আলোয় বা টিটুর ছায়ায়,
একটি সত্তা মিলিয়ে যায়,
অপ্রাপ্তির মাঝে যেন শান্তির আভাস খোঁজা হয়।
খাঁচার ভেতরে, প্রতীক্ষার প্রহর,
মুক্তির সন্ধান—
তবু আত্মা অধরা।
আর কত?
ধুমড়ে-মুচড়ে পড়ে মন,
এই খাঁচার ঘুণে কি প্রাণ কাঁদে না?
নিঃশ্বাসে বন্ধন—সেই খাঁচায় কী মুক্তি মেলে না?
তিন, তিন, তিন—
সত্য, শিব, আর সুন্দর,
মনের মাধুর্যে কেন আজ সত্যে মিলাই না?
গানের সুরে খুঁজি সেই আলোর সন্ধান,
মায়ার জাল ভেঙে কি সত্য আর আসে না?
বিনাশ চাই, এক মহা বিনাশ—
কালের মায়া আর শৃঙ্খল ভাঙার প্রতিজ্ঞা;
প্রাপ্তির বোঝা, আর সইতে পারি না,
এই রিক্ত হৃদয়ে যেন শুধু শূন্যতার গান।
থাক আমার শিবের শান্তি, সুন্দর ব্রহ্মের স্পর্শ,
মুক্তির সুর, সেই পথের গান,
খাঁচার কথা যেন কভু ফিরে না আসে আর।
নাম - প্রদীপ দাস।
পিতার নাম - দেবেন্দ্র দাস।
পেশা - শিক্ষক।
ঠিকানা - তিলক চাঁদ রোড, করিমগঞ্জ, আসাম।
0 মন্তব্যসমূহ