দীপালী দাশগুপ্তের আলো আঁধারের কবিতা

দীপালী দাশগুপ্তের আলো আঁধারের
কবিতা



দীপালী দাশগুপ্ত র জন্ম কোলকাতায় এবং সেই  সাংস্কৃতিক পরিবেশে ই বেড়েওঠা কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শণ বিভাগে, 
স্নাতকোত্তর ও সঙ্গে কত্থক নৃত্য শৈলীতে  নৃত্যশ্রী
বিবাহের পরে ভিলাইতে বসবাস।  ভিলাই তে "মধ্যবলয়" পএিকার সম্পাদক প্রয়াত শ্রী শিবব্রত দেওয়ানজীর উৎসাহে সাহিত্য চর্চা।  ৩টি কাব্য গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। ১.আলোয়ফেরা ২.স্মৃতির বাঁধনে
৩. মনেমনে



ঠিকানা 

চঞ্চল মনের সর্বহারা গতি সরিয়ে ফেলে অগুনিত স্মৃতির মোহময় ভান্ডার
যেদিকে তাকাই সেদিকেই স্মৃতির ছন্নছাড়া স্রোতের চলমান গতি, তবু ছেঁটে ছেঁটে বার করি
অতীতের ফেলে আসা মুহূর্ত গুলি
যেখানে রয়েছে আমাদের প্রেমের একটি কাহিনী, 
পাহাড় আর সমুদ্রের অলৌকিক মিলন,
ভোরের শিশির সবুজ ঘাসের পরে আলুথালু 
শহরের ধূলিকণা চলন্ত গতিতে বিলীন শহরের  গুপ্ত অলিতে-গলিতে 
মন প্রজাপতি ঝেড়ে ফেলে স্বপ্নের অশরীরী ছবি
বার বার ফিরে চলি বর্তমানের চলতি হাওয়ায় 
মিশে যাই সবার সাথে,ভাসিয়ে দি আমার নৌকা
অগাধ জলের দুরন্ত স্রোতে।।

দিশাহারা

দিশাহারা হয়ে ছুটে বেড়াই এখানে ওখানে
আমাদের গোপন কথা এখন লুকিয়ে অলস মেঘের  অন্তরালে, মেঘের পরে মেঘ জমে আকাশ কে করেছে ক্লান্ত
মূকবধিররা তাড়া করেছে কালের যাএা কে
ছেড়ে যেতে হবে পৃথিবীর এই অনাবিল আনন্দ আর স্বপ্নের খেলাঘর ধীরে অতি ধীরে
শুধু তোমার আমার গোপন কথা কালের দুরন্ত স্রোতে ভেসে যায় দূরে বহু দূরে --
অনন্ত আকাশে

কবিতার সংলাপ 

নীল সমুদ্রের অতল তলে ছড়িয়ে পড়েছে বাসমতী র সুগন্ধি
চলতে চলতে খুঁজে বেড়াই আমার মনকে যা বার বার হারিয়ে ফেলি মহাবলিপুরমের সুচারু বাহুবন্ধনে, সমুদ্রের জলে রোমন্থন করে টুকরো টুকরো  স্মৃতি মেদুর আকাঙ্খা যাকে ছুঁতে গিয়ে সরে আসি যাএা রেখে অসম্পূর্ণ 
একাদশীর অচিন অজানা প্রান্তরে হারিয়ে যেতে গিয়ে হারিয়ে ফেলি কবিতার সংলাপ 
বুঝতে পারলে কি মনের দিগন্তে লেখা ইলোরার নিঃশব্দ ইতিহাস যেন ঐতিহ্য র প্রাচুর্যে সমৃদ্ধ জীবন দর্শন 
ধীরে ধীরে ভাবনা গুলি দিয়ে দি জলাঞ্জলি আবেগহীন অনন্ত মেঘের খেলাঘরে
প্রতিটি মুহূর্ত উজ্জ্বল আলোর শিখা জ্বালিয়ে রাখি
অনন্ত  আকাশ জুড়ে


ফেলে আসা মুহূর্ত 

পুরনো স্মৃতি গুলো ঝরে পরে জমাট অশ্রু  হয়ে মনের দুয়ারে
খুঁজে বেড়াই  সেই সুন্দর  জীবন কাহিনী যা বৃষ্টি স্নাত রজনীগন্ধার সুবাস ছড়ায়  সমস্ত হৃদয় জুড়ে 
মনে পড়ে সেই স্কুল জীবন এর লেখা পড়া আর
খেলাধুলার বর্ণময় ইতিহাস 
লাবণ্য দির ইতিহাসের ক্লাস আর সঙ্গে উপরি পাওনা কবি জীবনানন্দের মর্ম কথা, রত্নাদির 
অঙ্কের ক্লাস সাথে দুষ্টুমী করার কড়া শাস্তি, শোভাদির গানের ক্লাস, বড়দির উপদেশাবলি 
সব কিছু জলছবি হয়ে ফুটে ওঠে অলস সন্ধ্যা র
অবশ বুকের মাঝে
স্তিমিত নয়নতারা জ্বলজ্বল করে নিবিড় রাএির অবকাশে 
ছেড়ে যেতে পারিনা বন্ধু স্মৃতির  চলমান ছবিকে 
আঁকড়ে ধরি ঝড়াপাতার সেই সুবর্ন দিনগুলো যা
আমার শূন্য বুকে গুমরে গুমরে আঘাত করে অলস গতিতে।।

ভালবাসা

মানুষ মানুষকে ভালবাসে অকারণে 
পাখী ডানা মেলে নীলিম আকাশে --
মিঠে সুরে গান গেয়ে --দিগন্তের সাথে জমায় পিরিত ভালবেসে 
ভালবাসার অর্থ বোঝা বেশ কঠিন
আজ সুন্দর সম্পর্ক, কাল স্বর্গ পতন, ছন্দপতন
তবু দলাদলি,  কাড়াকাড়ি 
জীবন এক খোলা পাতা
সম্পর্ক ও আগাগোড়া মায়াময় ছলনা
এসেছি  একলা চলে যাব নতুন জগতে অমৃতের
সন্ধানে,  তাই নিজেকে নিয়ে সময় কাটাতে চাই 
সুর ছন্দের চলমান জগতে
তাকেই কি বলে ভালবাসা?

নতুন ভুবন

শুকনো আলের মাঝে ছিন্নভিন্ন  রাস্তা আলতোভাবে মারছে উঁকি ঝুঁকি 
সঙ্গে আছে চতুর হাওয়ার নিরব কারসাজি 
তবুও যেতে হবে অনাবিল আনন্দ সাথে করে
মুমূর্ষু আলোর ধুনুচি  সঙ্গে নিয়ে 
তোমাকে খুঁজতে রাস্তায় পেয়ে যাবো নব কিশলয়ের নীরব ভাষাহীন উল্লাস আর গোধূলি বেলার ধূসরতা, তবুও ধীর পদে এগিয়ে  যাব আশার পথ ধরে 
সুগন্ধী ফুলের সুবাস নিয়ে এক নতুন ভুবনে।

ভালবাসা

বিকেলের নরম মুহূর্ত আর মনের অহরহ কুহূতান 
অস্পষ্ট ছায়ার মতো মিলিয়ে যায় স্রোতস্বিনী নদীর  গহীন তলে 
ধূসর আলোর ঝলকানি, আর স্বচ্ছ চাঁদের পান্ডুলিপি নিয়ে  চলে উজ্জ্বয়িনীর উচ্চচকিত মহল
একদিন যেখানে কাঁকন চুড়ির রিনিঝিনি 
সম্মিলিত নারী কন্ঠের সুরেলা হাসি, জীবন দর্শন এর পাঠ চলতো তা এখন পরিত্যক্ত নিস্তব্ধ কালের করাল রেখায়
স্বপ্ন একদিন ডুবে যায়, তাই সূর্যের অপেক্ষা 
অন্ধকার কে বিদায় জানিয়ে,নবীন ভোরের আসমানী রঙে ঢেলে দিতে
জীবনের সব টুকু ভালবাসা।

মুহূর্ত 

মুহূর্ত গুলি  আসে যায়
নিরবিচ্ছিন্ন অহংকারে
হাতের মুঠো থেকে গলেযাওয়া চিএপট সাতরঙা 
আলোর অজাচিত রশ্মি ভেদ করে আমাকে অব্যক্ত করুণ  সুরে আহবান করে
আর সেই স্রোতে ভেসে যাই দূর তেপান্তরের শেষ  সীমানায়
একাকীত্বকে আঁকড়ে, ধীর লয়ে আলিঙ্গনের দৃঢ় ছায়ায় হারিয়ে যাই
মনগড়া মেঘের খেলাঘর, খোলা হাওয়ার ধারাপাত আমাকে এগিয়ে নিয়ে চলে শর্তাধীন প্রেমের অলীক তরঙ্গে
খুঁজি আমার মনকে  ক্যানভাসের রঙ্গীন ছবির বাহুবন্ধনে
তিস্তা বয়ে চলে নীরবে নিস্তব্ধ অন্ধকারকে পিছনে ফেলে নতুন কলতানে
নিকষ অন্ধকারে মায়ের বুকে শুয়ে থাকা শিশু ভাতের গন্ধ শুঁকতে শুঁকতে  সুখ স্বপ্নে আচ্ছন্ন 
জীবন  এগিয়ে চলে অনুভব করি মানুষের ক্লান্ত ইতিহাস 
মায়ামৃগ হারিয়ে যায় অদৃশ্য কালের অন্ধকারে।।


কবি প্রণাম 

মধ্যে গগনে বিরাজমান হে কবি! 
পৃথিবীর এক বলয় থেকে আরএক বলয়ে তোমার আনাগোনা 
হৃদয়ের মধ্যমণি তুমি চির শাশ্বত 
তোমার তুলির আঁচড়ে রঙের শোরগোল 
নিকষকালো অমাবস্যার জ্বলন্ত মশাল 
তোমার কলমের এক আঁচড়ে
সাধারণ মেয়ে হয়ে ওঠে অসাধারণ 
এ যেন সাগর জলের ফেনা থেকে উঠে আসা একটি নিটোল মুক্ত 
তোমার কালো মেয়ের কালো হরিণ চোখ 
সুদূর গীত মালার কোমল কাব্য 
তোমার কল্পনা থেকে ভেসে আসা ছোট্ট ছেলেটা দেখিই না এই তার লোভ 
তোমার স্বপ্নের  ক্যামেলিয়া সাঁওতাল মেয়ের কালো গালের উপর আলো করে থাকে 
এদের ভুলি কেমন করে? 
তোমার বৈরাগ্য তোমাকে গ্রীষ্মের খড়দাহে ছুটিয়ে নিয়ে চলে মধ্যেদিনের রাখালের মনকাড়া বাঁশী শুনতে 
বৃষ্টির সজলছায়া পেখম মেলে তোমার গানে 
মাতাল করে আকাশ বাতাস 
শরতের শুভ্র কাশের গুচ্ছ হাওয়ার তালে দুলতে থাকে 
হিমের রাতে আমলকী বনের শিহরণ 
দীপালিকার প্রজ্জ্বলিত আলোকে জয় করে ঘোর তামসীকে 

বসন্তের আগমনে তুমি উচ্ছ্বসিত উদ্বেল 
বেজে ওঠে বীণা ছড়িয়ে পড়ে সুরের মূর্ছনা আকাশে বাতাসে 
তোমার কথা তোমার সুর তোমার গান
গুনগুন করে অন্তরে বাহিরে 
হে কালজয়ী কবি! তোমাকে অনুভব করতে চাই 
অন্তর হতে জীবন দর্শনের প্রতিটি পাতায়
তুমি লহো মোর অঞ্জলি।

শুভ নববর্ষ 

প্রভাতী আলোর ঘুম ভাঙ্গা ডাক
আকাশ জুড়ে সাদা নীলের ভাসমান শোরগোল 
উরন্ত তিতিরের মেলে দেওয়া ডানার নৃত্য কলরব সঙ্গে আনে নতুন বছরের আগমনী সঙ্গীত 
রবির ভাষায় " এসো হে বৈশাখ এসো এসো"
বিগত বছরের সুখ দুঃখ, আশা নিরাশা হতাশার বাষ্প যাক চলে দূর দিগন্তে, শুধু থাক স্মৃতি সুধা
মনের মণিকোঠায় অলস তন্দ্রায় আছ্ন্ন বাঁধনে
এসো এসো হে নতুন এই সুন্দর পরম লগ্নে
জানাই তোমায় স্বাগত আহবান উল্লসিত শঙ্খ নিনাদে।

আলো আঁধার

আলো আঁধারের  নিঃশব্দ গতি  আমার মনের  রুদ্ধ
দুয়ার খুলে দেয় 
স্মৃতির অঙ্গারে ভেসে  ওঠা সুখ দুঃখ এক সঙ্গে কলরব করে
দূর থেকে দেখি প্রিয় জনের দারুচিনি মাখা উজ্জ্বল  জলছবি 
আসছে যাচ্ছে মিলিয়ে যাচ্ছে শূন্য বিতানে নীল আকাশের আড়ালে 
সূর্য অস্ত যাবার আগে হাত বাড়াই সূর্যের  লাল আলোর দিকে 
কিন্তু সেতো ধীরে ধীরে চুপিচুপি হামাগুড়ি দিয়ে  মিলিয়ে  যায় শৈত্য প্রবাহের দিকে 
যে অঙ্কুর জেগে উঠেছিলো  সূর্য লোকের  অমৃত ধারায় সে কি হয়ে গেল নিঃশব্দ কালের বিবর্তনে? 
শূন্যর নীলিমায় খুঁজি ঘর ও বাহির
  স্মৃতির মনিকোঠায় সযত্নে রাখা সুখ দুঃখের সাথে যাই মিশে
মানতে হয় জীবনের চরম সত্য 
তাই মনের দরজা বন্ধ করি নিঃশব্দে।

কল্পনা 

আজ সারা রাত ধরে উড়ে  বেড়াচ্ছি কল্পনার অভিনব তরঙ্গ মেলায়, তাকিয়ে দেখার প্রচেষ্টা, কখনো ভাবতে  ভাবতে উঠছি চেয়ার ছেড়ে 
বৃষ্টি তো মুখ  ফুলিয়ে বসে আছে মানুষের কান্ডকারখানা দেখে
কোথায় কবিকুল ঝড়ো ঝড়ো বরিষে বারি ধারার উপর লিখবে কাব্য গ্রন্থ  সব কিন্তু আপসেট, চারধারে কালো মেঘ খল নায়কের মতো দুরন্ত পাক খাচ্ছে 
কি করবো তাই স্বপ্নের ডানা কে উড়িয়ে দিলাম নীলিম আকাশে, ঘুরে বড়ালাম সিঙ্গাপুরের মনোহর সমুদ্র সৈকতে 
সব ছেড়ে সিঙ্গাপুর  কেনো? প্রশ্ন  উঠতেই পারে
আরে বাবা! এইতো সেদিন পুরীধাম ঘুরে এলাম, তাই কল্পনার পাখা ঘুরিয়ে  দিলাম অন্য মুখে।।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ