সম্রাট শঙ্খপল্লব ও শ্মশানগাথা || শঙ্খপল্লব আদিত্য

সম্রাট শঙ্খপল্লব ও শ্মশানগাথা

শঙ্খপল্লব আদিত্য

প্রেমিকের রুমাল ও নীল খাম মাড়িয়ে সবুজ তিরের মতো মহিলারা সাঁই সাঁই হেঁটে যাচ্ছে শহর রাজধানীর হরলিকসে । আগামী তিন চার দশক পর শহরের আবর্জনা ও ময়লা আড়তের কাছে, এইখানে আবিষ্কৃত হবে এক সম্রাটের কবর ও কারখানা । ভারতীয় বস্তির জমিদারি আস্তাবলের মতো জীবন ও সংগ্রামের পতাকা নিয়ে সভ্যতার দালান রেলিং ধরে হেঁটে যায় এক পুরুষ মাতাল। তার গোপন মুখে ক্যান্সার চাদর ঢাকা এক প্রচন্ড পতন-উত্থানের সঙ্গীত । মন্দির ও বেশ্যালয়ের ফাঁক দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে মানবের সোনালি জীবন, পবিত্রতা ও যৌনতা কোনওটাই এড়াতে পারেনি রোমান ও লায়লি । পারাপারহীন ক্ষুধা ও তৃষ্ণা নিয়ে মানুষের সুখ থাকে, সুখ যায় । কয় গ্লাস পান করলে মানুষের তৃষ্ণা মেটে ? স্টিল ও প্লাস্টিকের ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে বেঁচে আছে আমাদের সবুজ অনুভব । দুর্দিনে রত্নাদির ১০ টাকার মানবতা রেস্তোরাঁয় খেয়ে হাই তুলে বলে উঠেছি ‘শাবাশ’। মহিলার সুখ ও দুঃস্বপ্ন আমাকে এক অপরিচিত অসুখের দিকে ঠেলে দেয় ভাদ্রের পারদজ্যোৎস্না বালিশে বেঁধে নিয়ে নেশা বিছানায় শুয়ে আছি । কল্যাণী থেকে ক্লাউন বাসে ফিরছি, ঈশান আকাশের বৈদ্যুতিক অশ্বারোহী মানুষের ঘুম ও সুখের দিকে ছিটকে দিচ্ছে ১০ লক্ষ বহ্নিফুল, হাইফাই আওয়াজের বিশ্রি মঞ্চ থেকে স্বাস্থ্যবান ছারপোকার মতো এইসব ফুলপান্ডু লিপির ভাঁজে লুকিয়ে রেখে ১২ মহাপুরুষ শুয়ে থাকে শৌখিন গাড়ি বারান্দায় অথবা স্বর্গের সিট রিজার্ভ রেখে নকশি সোফারই বেডসিটে । ১০ ইঞ্চি পুরু ইটের গাতনির ভেতর থেকে মানুষের আত্মা গলগলিয়ে যাচ্ছে । মধ্যরাতে বুকের বিচিত্র মাদুলি ও টুপিতে হাত দিতেই বাইরে থেকে ফটক ও তালা খোলার মতো ঠক ঠক ঠক ঠক শব্দের ভেতর একজন দানবাকৃতি সাহেব মানুষের ভাগ্যের খুলিতে করে দিশি মদ খেতে খেতে ঘাম ঝাড়ছেন আর সাড়ে তিনহাত কবর খুঁড়ছেন । সামনের ফলকে ভাস্কর্যের রোমান হরফে লেখা আছে , ‘এখানে শুয়ে থাকবেন সম্রাট শঙ্খপল্লব এবং সময়কুকুরের পান্ডুলিপি।‘ প্রধান রাজধানী শহরে মন্ত্রীদের বাসভবন ও সেনাছাউনির মধ্যবর্তী পিচের কাছাকাছি এই কবরের পাশে কয়েকটি শিয়ালমূত্রির গাছ ও ভূতের থু থু জাতীয় বাতাসে ফর ফর করছে । হাওড়া ব্রিজের চেয়ে এক বিঘত দূরত্বের ব্যবধানে রেখে আমি ও অশ্রু হেঁটে যাচ্ছি। আমি যতোবার ফুল ও ভালোবাসা অশ্রুর দিকে ঠেলে দিয়েছি সেও ততোবার সমান ওজনের অচল ১০ পয়সা ছুঁড়ে দিয়েছে আমার দিকে। চোরাই চালানের ট্রাকের মতো নিজস্ব আড়তে পৌঁছবার শব্দ করে এগিয়ে যায় সাহেবের কবর খোঁড়ার কাজ ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ